টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দের কাজ কী?


টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দের কাজ কী,এরা আসলে কি
করে, কেনই বা এদের কে উচ্চবেতনে চাকরি দেয়
টেক্সটাইল শিল্পমালিকরা..!
এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রায়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমার মত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের। আর যারা এই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা বা ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্যে এই লেখাটি বেশ গুরুত্ববহ এবং কার্যকর হবে আশা করি।
-
..অনেকেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার নামশুনলেই নাক
সিটকান, বলেন এইটা কোনইঞ্জিনিয়ারিং হইল, কাপর-
চোপরের আবার কিসেরইঞ্জিনিয়ারিং?
শতকরা ৮০ভাগ লোকই জানেননা যে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি মানে কাপর-চোপরের ইঞ্জনিয়ারিং
না।
এটি সম্পূর্ন ম্যানুফ্যাকচারিং বেসড একটি
প্রসেসযেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মেশিন
সেটাপথেকে শুরু করে প্রসেস কন্ট্রোল,
প্রোডাক্টদেভেলপমেন্ট , গিয়ার মেকানিজম এবং
মেইন্টেনেন্স নিয়ে কাজ করতে হয়।
স্পিনিং এর ইঞ্জিনিয়ার দের প্রোগ্রাম ইনপুটদেয়া
জানতে হয়। ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রথম
সারির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারহতে হয়।
“নাসার বিজ্ঞানিরা যারা দীর্ঘদিনযাবত মহাকাশে
মানুষ পাঠাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা অসংখ্য
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের গবেষনায় নিযুক্ত করে
স্পেস স্যুট এবং ন্যানোফাইবার, কার্বন ফাইবারের
শিল্ডতৈরীর জন্য ।”
অতি সম্প্রতি বুয়েট নন-ওভেন জূটটেকনোলজী কে জিও
টেক্সটাইল হিসেবে সিভিলইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজে
ব্যবহার শুরু করেছে,আগামিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের
নিয়মিত বিষয়হিসেবে যখন জিও-টেক্সটাইল পড়ানো
হবে তখনএই কোর্সের জন্য বাংলাদেশের
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দেরকেই শিক্ষকহিসেবে পাবে
তারা।
সত্যি বলতে কী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
সাবজেক্টের সাথে সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে আইপিই
ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
এর সাথে।
যাই হোক, পেশা হিসেবে অনেকের অ্যালার্জি
থাকলেও বাংলাদেশে একমাত্র টেক্সটাইল
ইঞ্জিনিয়াররাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে“মেইড ইন
বাংলাদেশ ” ট্যাগ এ ব্র্যান্ডিং শুরু করেছে।
-
আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান ( যেমন-ওয়াল্টন )দাবি করে
তারা নাকি বাংলাদেশকে ব্যান্ডিং করছে,
আন্তর্জাতিক হাজার হাজার ব্র্যান্ডের ভিড়ে কয়জন
মানুষ ওয়াল্টন ব্যবহার করে কেউ জানে?
-
“জেনে রাখুন বিশ্বের ২য় বৃহত্তম জিন্সব্র্যান্ড এইচ এন্ড
এম শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকেই বছরে ১৩০ কোটি
মার্কিন ডলার মুল্যের পন্যনিয়ে থাকে, আজ আমরা
যারা হলিউডের মুভি দেখে অভ্যস্ত তারা কয়জনে জানি
এই সব নামীদামি সেলিব্রেটিরা বাংলাদেশ এর
নামকে এক্টি ব্র্যান্ড হিসেবে জানে?
ফুটবল বিশ্বকাপে গ্রেড ওয়ান জার্সি , ন্যাটোর
ক্যামোফ্লেজ ড্রেস থেকে শুরু করে ডিজেল, রিবক,
নাইকি,পুমা কারা নির্ভর করে না এই দেশের টেক্সটাইল
প্রোডাক্ট এর উপর? আর যারা বিশ্বেরদরবারে
বাংলাদেশ কে একটি ব্র্যান্ডহিসেবে পরিচিত
করেছেন তারা এই দেশের ইটেক্সটইল ইঞ্জিনিয়ার রা।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ কে টেক্সটাইল
সেক্টরের পরবর্তি চীন হিসেবে ঘোষনা করেছে।
Feel proud to be a টেক্সটাইলইঞ্জিয়ার…”আশা করি
যারা জানো না তাদের অনেকের ভুল ভেঙ্গেছে।
ভর্তিচ্ছুদের প্রতি কিছু টিপস অনেকেই জিজ্ঞেস
করেছে যে textile পড়ে বাইরে(বিদেশে) জব করা যাবে
কিনা?
আবার অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে যে এখান থেকে পড়ে
বিদেশে পড়াশুনার সুযোগ আছে কিনা…?
সব গুলো প্রশ্নের উত্তর হল হ্যাঁ।এখন আশা যাক যে কোন
ডিপার্টমেন্ট ভালো হয় পড়ার জন্য।
তার আগে বলে নেই ৪ টা ডিপার্টমেন্ট এর নাম ও তাদের
কাজঃ
১- Yarn Manufacturing Engineering : মূলত কাজ হল ফাইবার
থেকে সুতা প্রস্তুত করা।
2 -Fabric Manufacturing Engineering : মূলতকাজ হল সুতা
থেকে Weaving or Knitting এর মাধ্যমে ফেব্রিক বা কাপড়
প্রস্তুত করা।
৩ -Wet processing Engineering: মূলত কাজ হল ফেব্রিক এ
বা সুতাতে রঙ করা।
৪ -Apparel Manufacturing Engineering: মূলত কাজ হল রঙ
করা বা Finished ফেব্রিককে কেটে এবং সেলাই করে
Export উপযোগী করে Export করা।
এবার আশা যাক কোন সাবজেক্ট এ পরবা।
সেটাও তোমার উপরেই নিরভর করে। তুমি কোন বিষয়ে
পরবা সেই সিদ্ধান্তও তোমাকেই নিতে হবে। আমি
এখানে শুধু তোমাদের একটু হেল্প করতে পারি।
প্রথমেই ঠিক করো যে তুমি কোন সেক্টরে ভালো করবা?
তোমার যদি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছা থাকে প্রবল
তবে তুমি Yarn Manufacturing, Fabric Manufacturing, বা
Wet processing পড়তে পারো। কারণ এই তিনটা সাবজেক্ট
হল একেবারে ইঞ্জিনিয়ারিং।
তার মধ্যে ইয়ার্ণকে বলা হয় “Mother of Textile
Engineering”,
এখন আশা যাক ম্যানেজমেন্ট এর ব্যাপারে।
তোমার যদি ম্যানেজিং পাওয়ার ভালো থাকে,
ইংলিশ এ দক্ষতা বেশ ভালো থাকে তবে এই সাবজেক্ট
এ পড়া ভালো।
বাদ পড়ল অ্যাপারেল । এই সাবজেক্ট এ পড়তে হলেও
তোমাকে ম্যানেজিং পাওয়ার ও ইংলিশ এদক্ষতা বেশ
ভালো থাকতে হবে।
-
আর মেইন কথা হল, তোমাকে অবশ্যই চাপাবাজ হতে হবে
এখান থেকে জব করতে হলে।
আর তুমি যদি উচ্চতর পড়াশুনার জন্য বিদেশে যাবার
চিন্তা করে থাক তবে Yarn Manufacturing বা Fabric
Manufacturing পরাই ভালো। কারণ এখান থেকে যাওয়া
বেশ সহজ।
Wet processing থেকেও যেতে বেশি প্রব্লেম হয় না।
এতক্ষন তো অনেক কচকচানি করলাম। এখন আশা যাক
বেতন এর কথায়। বেতন অনুযায়ী কোন সাবজেক্ট ভালো
হবে?
মন দিয়ে পরো।
–>ওয়েট প্রসেসিংঃ যদি তোমার কাছে বেতনটাই বড়
কথা হয় তবে ওয়েট এ পরাই ভালো। এখানে ৪০ডিগ্রি
তাপমাত্রায় কাজ করতে হয়, রঙ নিয়ে সবসময়ে টেনশনে
থাকতে হয়। আর ওয়েট এপড়তে হলে তোমাকে
টেকনিকাল ব্যাপার জানারপাশাপাশি chemistry
সম্পরকে অনেক বেশি ধারনা রাখতে হবে। কারণ এটা
chemistry based. সো ভেবে দেখো যে কি পরবা।
–>ফেব্রিক মানুফেকচারিংঃ এটা বেশ মজার
সাবজেক্ট। এটা পরলে অনেক মজা পাবে।তবে
টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো বেশভালো করে বুঝতে হবে।
আর মেশিনভালো বুঝতে হবে। জব করে খুব আরাম পাবা।
এটাকেও পিওর ইঞ্জিনিয়ারিং বলা হয়। আর এখানে
দুইটা ভাগ আছে Knitting আর weaving.এখানে একটা কথা
আছে। নিটিং এ কোন সমস্যা নাই, তবে ওয়েভিং এ বেশ
শব্দ হয়।
–>আপারেল মানুফ্যাকচারিংঃ এখানে জব বেশ
ভালো। কর্পোরেট টাইপের জব। তবে আগেই তো বলেছি
ম্যানেজিং পাওয়ার ও ইংলিশ এদক্ষতা বেশ ভালো
থাকতে হবে। আর মেইনকথা হল তোমাকে অবশ্যই
চাপাবাজ হতে হবে এখান থেকে জব করতে হলে।
কারণ বায়ার এর সাথে সব সময় তোমাকে উঠা বসা করতে
হবে।
–>ইয়ারন মানুফাকচারিংঃ একে বলা হয় মাদার অফ
টেক্সটাইলস। ইয়ারন ছাড়া টেক্সটাইল এর অস্তিত্ব
কল্পনাও করা যায় না। তবে কিছু কিছুকারণে বর্তমানে
এই সেক্টরের জব একটু কম বেতনের। তবে জব করে বেশ
আরাম। কারণ পরিশ্রম কম করেও বেশ ভালো বেতন
পাওয়া যায়।পুরাই কর্পোরেট জব।সো অনেক কথাই তো
হলো। আম আমার মতামতদিলাম, এখন বাকিটা তোমার
দায়িত্ব। তোমার ভালো তোমাকেই বুঝতে হবে। তুমি
এখন এমন একটা স্টেজ এ পৌঁছেছ যে তুমি এখন মোটামুটি
সবকিছু বুঝতে শিখেছ।
-
আমি শেষে একটা কথা বলতে চাই।টাকাই কিন্তু
জীবনের সব কিছু না। নিজের Satisfaction কিন্তু অনেক
বড় কথা।ভালো থেকো, দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা
করো..!

No comments

Theme images by luoman. Powered by Blogger.